রসুলপুর চরে সাব মিটারে হাজার পরিবার

রসুলপুর চরে সাব মিটারে হাজার পরিবার

বিদ্যুত নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় আছেন বরিশালের রসুলপুর চরের হাজার পরিবার। সরকারি জমিতে বসবাস, তাই নিজেদের নামে বৈদ্যুতিক মিটার পাচ্ছেন না তারা। বাধ্য হয়ে একটি সমিতি কার্যালয়ের মিটার থেকে ৪শ’ সাব মিটারের মাধ্যমে বিদ্যুত ব্যবহার করছেন তারা। এতে একদিকে দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে রয়েছে বস্তির অন্তত ৮ হাজার মানুষ। অপরদিকে বিল বকেয়া সহ নানা কারনে প্রায়ই বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে হচ্ছে তাদের। বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন থাকাকালীন সুপেয় পানির চরম সংকট সৃস্টি হয় ওই বস্তিতে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিটি পরিবারকে আলাদা বৈদ্যুতিক মিটার দেয়ার জন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সু-দৃস্টি কামনা করেছেন ভূক্তভোগীরা। এদিকে বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যক্তিগত রেকর্ডীয় জমিতে বসতি স্থাপন ছাড়া বৈদ্যুতিক মিটার দেয়ার বিধান নেই তাদের।

বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড খালের অপর পাশে কীর্তনখোলা নদীর তীরে রসুলপুর বস্তির অবস্থান। বিগত ৪ দলীয় জোট সরকারের সময় কীর্তনখোলা নদীর নাব্যতা বাড়াতে ড্রেজিং করে বিআইডব্লিউটিএ। তৎকালীন হুইপ ও মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারের উদ্যোগে ওই পলিমাটি ফেলা হয় নদীর তীরে। এতে চরের আকৃতি সৃস্টি হয় সেখানে। ধীরে ধীরে সেখানে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে ভূমিহীন, ছিন্নমূল এমনকি প্রভাবশালীরাও। কিন্তু ওই চরে বিদ্যুত, সুপেয় পানি, স্বাস্থ্য সন্মত টয়লেট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কেন্দ্র কিংবা কমিউনিটি সেন্টার কিছুই ছিলো না।

চরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে তৎকালীন মেয়র শওকত হোসেন হিরন ২০১০ সালে ওই চরে কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট কমিটি (সিডিসি) নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুত সংযোগ, বাতি, সুপেয় পানি, স্বাস্থ্য সন্মত টয়লেট, কমিউনিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং কমিউনিটি সেন্টার নির্মান করেন। কিন্তু চরবাসীর বসবাস সরকারি খাস খতিয়ানে হওয়ায় প্রত্যেক ঘরে ঘরে বৈদ্যুতিক মিটার দেয়নি কর্তৃপক্ষ। ওই সময় সিডিসি কার্যালয়ের বৈদ্যুতিক মিটার থেকে সাব লাইন নিয়ে সাব মিটারের মাধ্যমে ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করেন তৎকালীন মেয়র হিরন।

এভাবে ৪০০ সাব মিটারে চলছে হাজারো বস্তিবাসীর বিদ্যুত ব্যবহার। আবাসিক লাইনে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ৩ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে ৫ টাকা ৭৫ পয়সা হলেও বস্তিবাসীর কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে বানিজ্যিক সংযোগের বিল, প্রতি ইউনিট সাড়ে ১২ টাকা হারে। সম্প্রতি ওই চরে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করে মহানগর আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা। তার নিয়োজিত আনিস ও পরশ নামে দুই ব্যক্তি পাকা মেমোর মাধ্যমে সাব মিটারের প্রতি মাসের বিল আদায় করলেও প্রায়ই তারা সরকারি কোষাগারে বিল জমা না দেয়ায় বস্তিবাসীর বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুত বিভাগ। সব শেষ ১৩ লাখ ৪৬ টাকা বিল বকেয়ার অভিযোগে গত মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে রসুলপুর বস্তির (কলোনী) মূল মিটারের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

এতে সুপেয় পানির চরম সংকটে পড়েন বস্তির হাজারো মানুষ। তীব্র গরমে বিদ্যুত না থাকায় ত্রাহী দশায় পড়েন তারা। এছাড়া বাসাবাড়ি এবং দোকানের ফ্রিজে রাখা খাদ্য সামগ্রীও পঁচে যায়। পরে শীর্ষ রাজনৈতিক মহলের হস্তক্ষেপে পরদিন বুধবার বকেয়া বিলের টাকা জমা দেয়ার পর ওইদিন সন্ধ্যা পৌঁনে ৬টায় প্রায় ৩৩ ঘন্টা পর রসুলপুর চরের বিদ্যুত সংযোগ পুনরায় চালু হয়। এর আগেও বকেয়ার কারনে একাধিকবার বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় ওই চরের।

ভূক্তভোগীদের দাবি, তাদের কাছ থেকে প্রতিমাসে সাব মিটারের রিডিং অনুযায়ী সাড়ে ১২ টাকা হারে বিদ্যুত বিল আদায় করে স্থানীয় দুই ব্যক্তি। তাদের কাছে বিদ্যুত বিলের টাকা বকেয়া নেই। কিন্তু তারপরও সাড়ে ১৩ লাখ টাকা বকেয়ার অভিযোগে বিদ্যুত লাইন কেটে দেয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন বস্তির হাজারো পরিবার। বারবার এমন ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে বস্তির প্রতিটি ঘরে বৈদ্যুতিক মিটার দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান তারা।

তবে ওই চরে বিদ্যুত সরবরাহকারী ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী (ওজোপাডিকো) লিমিটেড বরিশালের বিক্রয় ও বিতরন বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক হোসেন বলেন, ব্যক্তিগত রেকর্ডীয় জমি না হলে সেখানে বৈদ্যুতিক মিটার দেয়ার কোন বিধান নেই। এ কারনে একটি সমিতি কার্যালয় থেকে ৪শ’ সাব মিটারের মাধ্যমে ওই চরের বাসিন্দাদের বিদ্যুত সরবরাহ করা হচ্ছে।

তবে নগরীর অন্যান্য বস্তিগুলো খাস জমিতে থাকার পরও সেখানে ঘরে ঘরে বৈদ্যুতিক মিটার দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই বস্তির বাসিন্দা মো. সবুজ হাওলাদার।